ইংল্যান্ডে কেয়ার ওয়ার্কার ভিসায় চাকরির সুযোগ

এবার ইংল্যান্ডে কেয়ার ওয়ার্কার ভিসায় আসার সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশিদের জন্য এটি একটি অভূতপূর্ব সুযোগই বলা যায়। কারণ, ছোটবেলা থেকে দেখেছি, আমাদের দেশ থেকে শ্রমিকেরা প্রচুর টাকাপয়সা খরচ করে মধ্যপ্রাচ্যর দেশগুলোয় কাজ করতে যান। এখনো সেই প্রচলন আছে এবং সম্ভবত সেই প্রচলন এখন আরও বেড়েছে। মজার বিষয় হলো, আমাদের দেশ থেকে এখন অনেক নারী শ্রমিকও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে মনোনিবেশ করছেন, বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন এবং মাঝেমধ্যে এ–ও শোনা যায় যে তাঁরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ইউটিউবে অনেকেই ভালো–মন্দ নানা রকম অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেন। ইউটিউবে কতজন তো সত্য–মিথ্যা কত কিছুই বলেন!

যেসব কারণে মধ্যপ্রাচ্যর দেশগুলোয় যাওয়ার বিষয়ে খুবই সতর্ক এবং উদাসীন, সেগুলোর অন্যতম হলো ওসব দেশে ন্যূনতম অথবা শুন্য মানবাধিকার। এসব দেশে মানুষের জীবনের কোনো মূল্যায়ন নেই, যেসব মানবিক অধিকার জাতিসংঘ ও ইউরোপের দেশগুলো নিশ্চিত করেছে, সেগুলো আরব বিশ্বে দৃষ্টিগোচর হয় না। শ্রমিকদের কোনো মানবাধিকার নেই বললেই চলে। সেখানে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয় এবং উপার্জনও সে রকম নয়। তা ছাড়া শ্রমিকদের নিরাপত্তা এসব দেশে যে যৎসামান্য, তা নিরাপত্তার সহিত বলা যায়। তারপরও আমাদের দেশ থেকে লাখো পুরুষ ও নারী শ্রমিক মধ্যপ্রাচ্যর দেশগুলোয় পাড়ি জমান। একটি বিষয় লক্ষণীয় যে সেসব দেশে যদি আপনি আপনার জীবনের অধিকাংশ সময় থাকেন (২০–২৫ বছর কোনো বিষয় নয়!) এবং গাধার মতো খাটুনি খাটেন, তারপরও কিন্ত কাউকে তারা সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ দেবে না। নাগরিকত্ব তো দূরের কথা। কোনো পেনশনের ব্যবস্থা আছে বলে মনে হয় না। একজন মানুষ যদি তাঁর জীবনের একটি বড় অংশ একটি দেশে ব্যয় করেন, তারপর তাঁকে সেখান থেকে বের করে দেওয়াকে অমানবিক। ইংল্যান্ডে তা হবে না।
ইউরোপীয় দেশগুলোসহ বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশে মানুষের (সে যে শ্রেণির মানুষই হোক না কেন!) ন্যূনতম অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। সেসব অধিকারের অন্যতম হলো কাজের অধিকার, ন্যূনতম বেতন, যা না হলে সংসার চলে না, কথা বলার অধিকার, রাজনীতি করার অধিকার, চিন্তা করার অধিকার, নিজস্ব ধর্ম পালনের অধিকার এবং স্থায়ীভাবে বসবাসের নিশ্চিত অধিকার। এ কারণে যাঁরা এখানে কাজ করতে অথবা পড়াশোনা করতে আসবেন, তাঁরা কোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য অথবা কাজের অভাবে কষ্ট করবেন না, না খেয়ে মারা যাবেন না। এখানে নারীরা কোনো ধরনের নির্যাতনের স্বীকার হবেন না। এখানে প্রত্যেক মানুষের রাতে ও দিনে নির্ভয়ে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। এখানে যদি আপনি বৈধভাবে কাজ করেন, তাহলে পাঁচ বছর পর স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পাবেন এবং কোনো অপরাধের সঙ্গে নিজেকে না জড়ালে এ দেশের নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন। আবার এ দেশের নাগরিকত্ব পেলেও আপনি আপনার দেশের, মানে জন্মভূমির নাগরিকত্ব হারাবেন না।

বিভিন্নভাবে ইংল্যান্ডে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আসার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কিছুদিন আগেও সেই সুযোগ ছিল না। তাহলে কী এমন ঘটনা যে কারণে ইংল্যান্ড বহির্বিশ্বের শ্রমিকদের জন্য তাদের সীমান্ত উন্মুক্ত করে দিল? ইহা অনিবার্য ছিল যে ইংল্যান্ডসহ ইউরোপের দেশগুলো বাইরে থেকে লোক নিয়ে আসবেই। তাদের দেশগুলো শ্রমিকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার কোনো বিকল্প ছিল না। এখানে জনসংখ্যা দিন দিন হ্রাস পেতে শুরু করছিল দীর্ঘদিন ধরে। জনসংখ্যা হ্রাস পাওয়ার অন্যতম কারণ হলো, এখানে মেয়েদের মধ্যে গর্ভধারণের প্রবণতা কম। ক্যারিয়ারের প্রতি অধিক হারে ঝুঁকে পড়া, স্বাধীনভাবে চলাফেরা, মেয়েদের মধ্যে বহির্গামী মনোভাব অধিক হারে বৃদ্ধি পাওয়া, ব্যয়বহুল জীবনসহ নানান কারণে নারীরা সন্তান নিতে অনাগ্রহী হয়ে পড়েন। সেই সমস্যা লাঘবে প্রথমে ইংল্যান্ড ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলোর জনগণদের তাদের দেশে অবাধে আসা এবং চলাফেরা করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। ফলে রোমানিয়া, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরিসহ ইউরোপের দেশগুলো থেকে প্রচুর লোক এখানে আসতে শুরু করেন। কিন্তু ইংল্যান্ডের জন্য বড় সমস্যা ছিল, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলোর শ্রমিকেরা এখানে এসে কাজ করার চেয়ে ইংল্যান্ডের সুবিধাদি নেওয়ার প্রতি অধিক আগ্রহী হয়ে পড়ে। তাদের ঘরভাড়াসহ চলাফেরা করা এবং খাবারদাবারের খরচ ব্রিটিশ সরকারকেই বহন করতে হতো। তা ছাড়া এখানে চুরিচামারি দিন দিন বাড়তে থাকে। তাই ব্রিটিশ জনগণ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের জনগণের প্রতি ক্রমেই অসহিষ্ণু হয়ে পড়ে। এরপরের ঘটনা—অনেকগুলো কারণে ইংল্যান্ড ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে এখানে বিভিন্ন খাত শ্রমিকসংকটে পড়ে। লরিচালক, চিকিৎসক, নার্স, হেলথ কেয়ার ওয়ার্কার, রেস্তোরাঁ কর্মচারী ইত্যাদি খাতে কর্মীসংকট পরিলক্ষিত। যার কারণে, কনজারভেটিভ পার্টির বরিস জনসনের সরকার যদিও অভিবাসীদের নিয়ে এসে ব্রিটেনকে মানুষে মানুষে টইটম্বুর করে ফেলতে অনাগ্রহী, তবু তাদের সীমান্ত অভিবাসীদের জন্য বিনা শর্তে উন্মুক্ত করে দিতে বাধ্য হয়। এ সুবিধা বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ বলা চলে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, কীভাবে বাংলাদেশ থেকে আসবেন এবং কারা আসতে পারবেন! এ জন্য বাস্তবধর্মী পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত। অযথা সাগরে সাঁতার কাটার মতো কোনো পরিকল্পনা ছাড়া দৌড়াদৌড়ি করলে কাজ আসবে না। এটি একটি কাজের ভিসা। সঙ্গত কারণে আপনাকে কোনো এমপ্লয়ার নিয়োগ করতে হবে। এখানে এসে যদি অবৈধ হয়ে পড়েন, তবে আপনার এখানে থাকা–খাওয়ার অর্থ উপার্জন করা অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে। আর এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সি যে টাকা আপনার কাছে দাবি করছে, আপনি যদি কিছু বিচার–বিবেচনা না করে সেই পরিমাণ টাকাই তাদের দেন, তাহলে কয়েকটি বিপদ সংক্ষেত দিয়ে রাখি,

১। এখানে আসতে পারবেন না। কারণ, ইতিমধ্যে এ দেশের সরকার কেয়ার হোমগুলোকে সতর্ক করে দিয়েছে যে এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সি নিয়োগ করা যাবে না অথবা এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সি যদি কোনো লোক দিয়ে থাকে, তাহলে তাঁদের নিয়ে আসা যাবে না। সরকার চায়, কেয়ার হোমগুলো নিজেরা সাক্ষাৎকার নিয়ে লোক নিয়োগ দেবে।

২। যদি আপনি কোনো এজেন্সিকে টাকা দিয়ে আসেনও এবং সেই এজেন্সি এমপ্লয়ারদের সঙ্গে যোগসাজশে আপনাকে নিয়ে এসে কাজ না দেয় এবং কেবল নিয়ে আসার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়, তাহলে এখানে এসে আপনার মানবেতর জীবন যাপন করার সম্ভাবনা বেশি। কারণ, এখানে জীবনযাপনের ব্যয় অনেক বেশি এবং বৈধ চাকরি না থাকলে তা অর্জন করা অনেক কঠিন হবে।

৩। যদি আপনি চাকরিদাতার সঙ্গে চুক্তি না করে আসেন, যেমন কত টাকা আপনার বেতন হবে, কত দিন আপনাকে বাৎসরিক ছুটি দেবে, আপনি অসুস্থ হলে কী কী সুবিধা দেবে; এসব চুক্তি না থাকলে আপনাকে গর্তের ভেতর ফেলে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

৪। সর্বোপরি দালালেরা আপনার কাছ থেকে প্রথম কিস্তিতে যে টাকা নিল, সেই টাকাও আর ফিরিয়ে না দিতে পারে এবং হয়তো প্রতিশ্রুতিমতো আপনাকে নিয়ে আসতে পারবে না।

তারপরও যদি কোনো এজেন্সি আপনাকে নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দেয়, আমার পরামর্শ হবে আপনি নিজেও আপনার এমপ্লয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। ই–মেইল করবেন, কথা বলবেন। দেখে নেবেন যে এমপ্লয়ার বিশ্বাসযোগ্য কি না!

কারা আসবেন?

ছেলে/মেয়ে, পুরুষ/ নারী (বয়স ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে)। এ দেশে পুরুষ ও নারী সবাই নিরাপত্তা পাবেন। তাই যদি কোনো নারী আসতে চান, আপনার কোনো আত্মীয় বা বন্ধুবান্ধব এ দেশে থাকা জরুরি নয়। এখানে কোনো ধরনের হয়রানি হওয়ার আশঙ্কা নাই। হেলথ কেয়ার সেক্টরের অধিকাংশ চাকরির জন্য কোনো যোগ্যতা থাকতে হবে না। তবে মনে রাখবেন, এখানে এসে আপনি ইংরেজিতে কথা বলা লোকেদের সঙ্গে কাজ করবেন। তাই তাঁদের কথাবার্তা কিছুটা হলেও বুঝতে হবে আপনাকে। সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে যে আপনার আইইএলটিএস স্কোর ৪ (প্রতিটি বিষয়ে চার—স্পিকিং, লিসেনিং, রাইটিং, রিডিং) হবে আইইএলটিএস (জেনারেল) ইউকেভিআই। এই একটি যোগ্যতা আপাতত। স্কিমটি ১২ মাস পর্যন্ত খোলা আছে, তাই তাড়াতাড়ি এ কোর্সটি এবং স্কোর করে নেন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় ন্যূনতম বেতন নিশ্চিত নয়। কিন্তু এখানে এ কাজে আপনাকে ২০ হাজার ৪৮০ পাউন্ড বাৎসরিক বেতন নিশ্চিত। আমরা যে এমপ্লয়ারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তারা আমাদের বলেছে যে তারা পছন্দ করেন, প্রার্থীরা নিজেরা দরখাস্ত লিখবেন এবং নিজেরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। তারা বলেছেন, তারা বাসস্থানের ব্যবস্থাও করবেন।

ইউরোপের অন্যান্য দেশ নয়, কেন ইংল্যান্ড?

আপনারা হয়তো দেখেছেন, সাঁতার কেটে সাগর পাড়ি দিয়ে মানুষ এখানে চলে আসতে চান। বিভিন্ন কারণে সাঁতার কেটে এখানে আসা যদিও নিরাপদ নয়। যেমন জার্মানি থেকে ফ্রান্সে এসে তারপর সাগর পাড়ি দিতে অনেকে ডিঙি নৌকা ব্যবহার করেন এবং তা ডুবে গেলে সাঁতার কেটে এসে পৌঁছাতে চান। কিন্তু তা সহজ নয়। অনেকেই মারা যান। আর যদি কেউ এসেও থাকেন, তবে বৈধ হওয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে। এসব ঝুঁকি গ্রহণকারীদের নিরুৎসাহিত করতে সরকার বৈধ পথে আসার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। মানুষ কেন ইংল্যান্ডে আসতে চান? তাঁরা তো জার্মানিসহ ইউরোপে থাকতে চান না। শুধু ইংল্যান্ডে চলে আসতে চান। এ বিষয়ে পরে লিখব।

কোন কোন পোস্টে লোক নেবে?

কেয়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট, কেয়ার ওয়ার্কার, কেয়ারার, হোম কেয়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট, হোম কেয়ারার ও সাপোর্ট ওয়ার্কার (নার্সিং হোম)। এসব পোস্টের জন্য কর্ম খালি খোঁজ করলে মিলবে নানান উত্তর।

কীভাবে চাকরি খুঁজবেন এবং দরখাস্ত করবেন?

গুগলে এসব নাম লিখে কর্ম খালি খুঁজলে আপনারা কীভাবে দরখাস্ত করবেন, তা বিস্তারিত পেয়ে যাবেন। মূলত একটি জীবনবৃত্তান্ত তৈরি করে এবং একটি সাহায্যকারী চিঠি সঙ্গে যুক্ত করে এমপ্লয়ারদের নির্ধারিত ই–মেইলে পাঠিয়ে দেবেন।

কোথায় কোথায় এই চাকরির খোঁজ পাবেন?

LinkedIn, Indeed, Reed, Carehome, Jobsite, Homecare, Totaljob, Agencycentral, Ageuk, Jobcommunity এসব সাইটে গিয়ে পোস্টগুলোয় কর্ম খালি খুঁজতে পারেন।

দরখাস্তের সঙ্গে কী কী জমা দিতে হয়? অথবা যদি কোনো স্পন্সর আপনাকে কাজ দিয়ে দেয়, তাহলে কী কী জিনিস জমা দেবেন? ১. দরখাস্ত
২. পাসপোর্ট
৩. সার্টিফিকেট অব স্পনসর/CoS (এমপ্লয়ার দেবে)
৪. এমপ্লয়ারের সঙ্গে চুক্তি
৫. অ্যাপ্লিকেশন ফি (২৩২ পাউন্ড ৩ বছরের ভিসা ফি)
৬. আইএইচেস/এনএইচএসফি (লাগবে না)
৭. টিবি টেস্ট সার্টিফিকেট
৮. আইইএলটিএস সার্টিফিকেট
৯. এক মাসের ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট ১২৭০ পাউন্ড থাকবে, মেইনটেইন্যান্স ফান্ড।

Share On

BICAVS

DISCLAIMER

Due to the periodic changes of information/requirement/document, BICAVS doesn’t provide any confirmation, guarantee or representation, express or implied, that the information contained or referenced herein is completely accurate or final. BICAVS also doesn’t assure the grant of visa for its ‘Visa logistics support’. Visa grant is the distinct decision of embassy or consulate of the respective countries.

RECENT POSTS

POPULAR POSTS

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments